দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে টানা চতুর্থবার ও সবমিলিয়ে পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও শপথ নিয়েছেন শেখ হাসিনা। এমন বিজয় অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট মেনুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। চিঠিতে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি গার্মেন্ট খাতের পরিস্থিতিও তুলে ধরেছেন তিনি।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর পাঠানো চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পঞ্চমবারের মতো দায়িত্ব গ্রহণ করায় আন্তরিক অভিনন্দন জানান ফারুক হাসান। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী, টানা চতুর্থবারের মতো আপনার প্রধানমন্ত্রী হওয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর পাঁচ দশকের ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা।
সারা বিশ্বে পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে ফারুক হাসান বলেন, ‘অত্যন্ত গর্বের বিষয়, আমরা ইতিমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যে পোশাক রফতানিতে (পরিমাণের দিক থেকে) শীর্ষ অবস্থানে চলে এসেছি। আপনার (শেখ হাসিনা) ভালোবাসায় সিক্ত ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক শিল্প প্রত্যক্ষভাবে ৪০ লাখ শ্রমিক ভাই-বোনের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে এবং বিশ্বের দরবারে দেশের জন্য অনন্য গৌরব বয়ে এনেছে।’
দেশের বিভিন্ন খাতের প্রধানমন্ত্রীর সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আপনার সরকার শ্রমবান্ধব। আপনি চেয়েছেন বলে আমরা গত ১৩ বছরে পোশাক খাতের শ্রমিক ভাইবোনদের মজুরি ৬৫২ শতাংশ বাড়িয়েছি। আমরা চাই, যে কোনও পরিস্থিতিতে আমাদের প্রতিটি শ্রমিক ভাইবোনদের কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখতে। তাই, টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের কারখানাগুলো যেন প্রতিযোগিতায় টিকে থেকে সচল থাকতে পারে, তার জন্য আপনার নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে আপনার সদয় সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।’
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আপনায় রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বে আমরা, সমগ্র জাতি এগিয়ে যাচ্ছি। আপনার সুযোগ্য সরকারের বলিষ্ঠ উদ্যোগে মেট্রোরেল প্রকল্পের বাকি অংশ, খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃদেশীয় রেল সংযোগ প্রকল্প এবং রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রভৃতি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য যে আমদানি ব্যয় মেটাতে হচ্ছে, তার জন্য বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান প্রয়োজন। এমতাবস্থায় রফতানি বাড়ানোর আর কোনও বিকল্প নেই। দেশের রফতানি খাতগুলো যাতে নিরবিচ্ছিন্ন ও নির্বিঘ্নভাবে রফতানি কার্যক্রম পরিচালনা করে জাতীয় অর্থনীতিতে আরও অবদান রাখতে সমর্থ হয়, সেজন্য আপনার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। বিশেষ করে রফতানি-আমদানি প্রক্রিয়াগুলো আরও সহজীকরণ ও গতিশীল করার জন্য আপনার সদয় দৃষ্টি একান্তভাবে আকর্ষণ করছি।’
ফারুক হাসান বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তোরণের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব বাজারে আমাদের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধার পরিবর্তন হবে। আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি, আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এলডিসি উত্তোরণের চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে পরিণত করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও সমৃদ্ধশালী হবে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের এবারের যাত্রায়ও দেশ ও জনগণের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফল হবেন এমন প্রত্যাশা জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আপনার ও আপনার সরকারের বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞানভিত্তিক কর্মমুখী, মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রসার ঘটবে এবং বিশ্বজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়ে দেশের অর্থনীতি আরও বেগবান ও শক্তিশালী হবে।’
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বিজিএমইএ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে একান্তভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন ফারুক হাসান।