আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ইতোমধ্যে লাভের মুখ দেখতে পেয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করা গ্রাহকদের টাকা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে অন্যান্যদের টাকা ফেরত দেয়া শুরু হবে আগামী মে মাস থেকে। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ইভ্যালির প্রধান কার্যালয় থেকে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মাদ রাসেল।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মাদ রাসেল বলেন, ‘ডিসেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ৪৯ লাখ টাকা মুনাফা করেছি। এর আগে আমরা আমাদের ১২০ জন কর্মচারীকে ঠিক মতো বেতনও দিতে পারিনি। এখন যেহেতু আমরা লাভে চলে এসেছি, তাই সবাইকে বেতন দেয়া কোনো সমস্যা হবে না। ভোক্তা অধিদপ্তরে প্রায় ৭ হাজার গ্রাহকের অভিযোগ রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা বৈঠক করে ওই সব গ্রাহকের টাকা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবো। এ ছাড়া আগামী মে মাস থেকে চেকসহ পুরাতন সকল দেনার টাকা পরিশোধ করা শুরু করা হবে।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আগে বেশিরভাগ পণ্যই লোকসানে বিক্রি করা হতো। তবে এখন যে পণ্য বিক্রি করছি সেগুলোর সর্বনিম্ন ২ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত লাভ রাখা হচ্ছে।
এই লাভের অর্থ দিয়ে কোম্পানির মাসিক ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। এজন্য ইভ্যালিকে নতুন করে কোনো দেনায় পড়তে হবে না। এখন আমাদের এই মুনাফা থেকে পাওনা বা দেনা পরিশোধ করবো। মুনাফা ছাড়া কোনো পণ্য আমরা বিক্রি করছি না। ব্যবসার যে ট্রেন্ড আছে, তাতে সকল গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করতে ২-৩ বছর লাগতে পারে। তবে কোনো বিনিয়োগ আসলে, তাতে দেনা পরিশোধের শর্ত দেওয়া হবে। তাতে করে ৬ মাসের মধ্যে সব গ্রাহকদের টাকা শোধ হয়ে যেতে পারে। অর্ডারের ক্রমানুযায়ী সকল গ্রাহকের মূল টাকা ধাপে ধাপে পরিশোধ করা হবে। খুব তাড়াতাড়ি গ্রাহকরা তাদের পুরাতন ডাটা নতুন অ্যাপে দেখতে পারবেন’।
রাসেল বলেন, ‘এখন আমরা সকল পণ্য সিওডিতে (ক্যাশ অন ডেলিভারি) দিচ্ছি। আগে গ্রাহকরা পণ্য পাওয়ার আগেই সরাসরি ইভ্যালিকে টাকা পরিশোধ করত। কিন্তু এবার ক্যাশ অন ডেলিভারি হওয়ায় গ্রাহকের কোনো ঝুঁকি নেই। এ ছাড়া গ্রাহকের পরিশোধ করা পণ্যের মূল্য এখন থেকে সরাসরি বিক্রেতার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে বিক্রেতারও কোনো বাকি পড়ার ঝুঁকি নেই। মার্চেন্ট থেকে ই-কুরিয়ার সরাসরি পণ্য নিয়ে গ্রাহকের কাছে পৌছে দিচ্ছে। আগে গ্রাহক পণ্য হাতে বুঝে পাবে, এরপর মূল্য পরিশোধ করবে। এখানে অর্ডার নেয়া ছাড়া কোনো কার্যক্রমে ইভ্যালি অংশ নিচ্ছে না। ফলে আমরা আরো স্বচ্ছতার সাথে গ্রাহকের কাছে দ্রুত পণ্য পৌঁছে দিতে পারছি।’
মোহাম্মাদ রাসেল বলেন, ‘ব্যবসা পরিচালনায় হয়তো কিছু ভুল ছিল, কিন্তু কোনো দুর্নীতি আমি করি নাই। আমি ব্যক্তি স্বার্থে কোনো অন্যায় করিনি। যা করেছি, ব্যবসার প্রসারে। এখন সকল গ্রাহকদের পাওয়া না টাকা ফেরত দেয়ার আগে আমি বা আমার পরিবারের কেউ এই প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো টাকা নেব না। আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে পরিবারের খরচ পূরণ করব।’
তিনি জানান, গ্রেপ্তার হওয়ার আগে গ্রাহকদের সাড়ে ৩০০ কোটি আর মার্চেন্ডদের ১৫০ কোটি টাকা দেনা রয়েছে। কিন্তু এখনকার হিসেবটা হাতে আসেনি। একই সঙ্গে পাসপোর্ট জমা দেয়া ও মামলা করা গ্রাহকের অনাপত্তিতে আদালত ৬ মাসের অন্তর্বতিকালীন জামিন দিয়েছেন।